নিঝুম দ্বীপের নির্জনতায়

প্রকাশঃ মে ২৪, ২০১৫ সময়ঃ ৯:০০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

nijum 1নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের এ বাংলাদেশ। নদ-নদী বিধৌত এ দেশে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি।

নিঝুম দ্বীপ! নাম শুনলেই অজানা এক শিহরণে কেঁপে ওঠে মন! চারদিকে সমুদ্র, নদীর মোহনা, কেওড়া বন আর সহস্র হরিণের অভয়াশ্রম এই নিঝুম অরণ্য! সকালে ঘুম থেকে জেগে শুনতে পাবেন অসংখ্য পাখির কলতান। নির্মল সূর্যোদয়। দুপুরের সোনারোদে বনের ভেতরের রূপ দেখে বিহবল হতে হবে যে কোন পর্যটককে। হঠাৎ হয়তো দেখবেন গাছের ফাঁকে একচিলতে সোনালি ঝিলিক! হরিণ! ওদের মায়াবী চোখ দেখে মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাবেন।

এ যেন প্রকৃতির সাথে লুকোচুরি! এখানে বিকেল আসে মায়াবী রূপ নিয়ে। সন্ধায় দূর ‘কবিরার চর’ এর ওপর দিয়ে সূর্য যখন অস্ত যাবে, সেই দৃশ্য নিশ্চিত ভাবেই আপনার দেখা শ্রেষ্ঠ সূর্যাস্ত হবে! এখানে রাত নামে আরও বিপুল সৌন্দর্য আর ঐশ্বর্য নিয়ে। বনের ওপর দিয়ে থালার মত পূর্ণিমার চাঁদের আলো এসে আপনার দেহ-মন জুড়িয়ে দেবে। সেই দৃশ্য স্বর্গীয়, সেই অনুভুতি অপার্থিব!nijum 20

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা দ্বীপটির একদিকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ, অন্যদিকে ছুটে আসা হিমেল হাওয়া আর সবুজের সুবিশাল ক্যানভাস দ্বীপটিকে দিয়েছে ভিন্ন এক রূপ বৈচিত্র্য।

নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় এর অবস্থান। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিলো। পরে এই নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করা হয়।মূলত বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চর মুরি এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ।

প্রায় ১৪,০০০ একরের দ্বীপ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত কোনো লোকবসতি ছিলো না, তাই দ্বীপটি নিঝুমই ছিলো। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। লোনা পানি বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছেরও সমাহার । ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে আখ্যায়িত করা হয়।

নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। হরিণের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাnijum33টা পড়লে শুঁকোয়। এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার।এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ।

ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে হাতিয়া চলে যাবেন। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একটা করে লঞ্চ ছাড়ে হাতিয়ার উদ্দেশে, সেটা সকাল আটটায় তমরদি ঘাটে পৌঁছায়। এখান থেকে একটা ট্রলার ভাড়া করে সোজা নিঝুম দ্বীপে চলে যেতে পারেন অথবা একটা বেবিট্যাক্সি নিয়ে জাহাজমারা ঘাট পর্যন্ত যেতে হবে, সেখান থেকে নৌকা নিয়ে নিঝুম দ্বীপ। সব মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ ঘুরে আসার জন্য তিন-চার দিন সময় হাতে রাখতে হবে।

তাই আসুন, বেড়িয়ে যান বাংলার স্বর্গ নিঝুম দ্বীপে। দেখুন নিজেকে। দেখুন বাংলাদেশকে।

প্রতিক্ষণ/এডি/জহির

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G